top of page
Search

কল্পবিজ্ঞানের কথা - ১

– ১–

কল্পবিজ্ঞান নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই সেই ভয়ানক প্রশ্নটা উঠে আসে - ‘কল্পবিজ্ঞান কাকে বলে ? ‘ উত্তর দেওয়াটা খুব একটা সহজ নয়, কারণ এ বিষয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে, এবং দিস্তে দিস্তে কাগজ, পিপে পিপে কালি এবং বাছা বাছা গালি খরচা করেও এ পর্যন্ত নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো তাকে কোন বজ্রআঁটুনিতে বেঁধে ফেলা সম্ভব হয়নি । ভবিষ্যতে হবে কিনা আমার জানা নেই, কারণ এ যাবৎ আমাকে কেউ টাইম মেশিনে চড়তে নেমন্তন্ন করেনি ।



কল্পবিজ্ঞান শব্দটির স্রষ্টা, যতদূর জানা, অদ্রীশ বর্ধন । কিন্তু সেটি যখন এসেছে ইংরিজী সায়েন্স ফিকশন থেকে, এই শব্দটি, যাকে নিয়ে এতো হৈহৈ রৈরৈ মারমার কাটকাট, তার একটু ইতিহাস দেখা যাক ।

১৯২৬ সালে মার্কিন মুলুকে হিউগো গার্ন্সব্যাক ‘অ্যামেজিং স্টোরিস’ নামে প্রথম সায়েন্স ফিকশন পত্রিকাটি প্রকাশ করতে শুরু করেন । সায়েন্স ফিকশন শব্দবন্ধটির জনক তিনি কিনা জানা নেই, তবে এই শৈলীর প্রথম পত্রিকাটি প্রকাশ করে তিনি যে এর জনপ্রিয়তাকে রূপ দেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । আজকাল সায়েন্স ফিকশনের ওপর যে কটি পুরস্কার দেওয়া হয়, তার মধ্যে হিউগো অ্যাওয়ার্ডটি এই হিউগো গার্ন্সব্যাকেরই স্মরণে ১৯৫৩ সাল থেকে দিয়ে আসা হচ্ছে । সায়েন্স ফিকশনে এই হিউগোর অবদান এতটাই যে চাঁদের একটা ক্রেটারেরও নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে - গার্ন্সব্যাক ক্রেটার ।


এবার শক্ত কোশ্চেনটাতে আসি । সায়েন্স ফিকশন কাকে বলে ? এর মধ্যে কতটা সায়েন্স আর কতটা ফিকশন ? এর উত্তর দেওয়া ভারি কঠিন । মানে ওই কে.সি. দাসের চৌবাচ্চা আর বাঁদরের অঙ্কের চাইতেও কঠিন । উইকিপিডিয়ার ‘ডেফিনিশন অফ সায়েন্স ফিকশন’ পেজটাতে রয়েছে অনেকগুলো ব্যাখা, যেগুলোর পরস্পরের সঙ্গে মেলে খুব কম, অথচ সায়েন্স ফিকশনে এ যাবৎ যা লেখা হয়েছে বা হচ্ছে তাদের সঙ্গে এদের বিরোধ প্রায় নেই। অর্থাৎ সায়েন্স ফিকশনের একটা আঁটোসাঁটো ব্যাখা দাঁড় করালে সেটা অনেকটা অন্ধের হস্তী দর্শনের মতো হয়ে যাবে , যা বলা হলো তার বাইরে রয়ে যাবে অনেকটাই । সুতরাং এই প্রশ্নটাকে এক কথায় উত্তর না দিয়ে বরঞ্চ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা দিক থেকে দেখা যাক ।


ওই উইকি পেজেই একদম ওপরের দিকে রয়েছে ১৯২৬ সালে হিউগো গার্ন্সব্যাকের দেওয়া ব্যাখা । তার মধ্যে শুরুতেই রয়েছে - "By 'scientifiction' I mean the Jules Verne, H. G. Wells and Edgar Allan Poe type of story—a charming romance intermingled with scientific fact and prophetic vision” । কিন্তু এতো শুরুতেই স্ববিরোধ ! সায়েন্স ফিকশনে scientific fact and prophetic vision - অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক তথ্য আর ভবিষ্যদ্বক্তার দৃষ্টি থাকতে হবে সে না হয় বোঝা গেল । কিন্তু ওই বাক্যের আগে হিউগো যে এইচ. জি. ওয়েলস আরে এডগার অ্যালান পোকে টেনে আনলেন, সেখানেই তো ফ্যাসাদ হয়ে গেলো । ওয়েলসের বিখ্যাত টাইম মেশিন গল্পটাই ধরুন না কেন ? সেখানে তো বিজ্ঞানের ব নেই । টাইম মেশিন কেমন দেখতে, মাইলেজ কত দেয়, ইঞ্জিন কোন সায়েন্সে চলে, সে তো ওয়েলস সাহেব কিছুই বলেননি !! তিনি তো সটান গল্পের নায়ককে ভবিষ্যতে পাঠিয়ে দিলেন আর এলয় আর মর্লকদের আমদানি করে ফেললেন । আর পো ? তিনি নিঃসন্দেহে সব ভালো ভালো ফিকশন লিখে গেছেন । কিন্তু সায়েন্স ? ইয়ে, যাকগে, জানতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ।


উইকি পেজের ব্যাখ্যাতে না হয় পরে আর একবার ঢুঁ মারা যাবে । রে ব্র্যাডবেরি অনুবাদ করতে গিয়ে দিন দুয়েক আগে নিজে যা শিখলাম বলি । ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড ম্যান’ বইটির ভূমিকায় ব্র্যাডবেরি লিখছেন, ‘What if’ is the operative term for many of these stories - ‘যদি’ হলো এই গল্পগুলোর অনেকগুলোর মূলমন্ত্র । তিনি ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে গিয়ে একটা ‘যদি’র সন্ধান করেছেন, তারপর তার পরিপ্রেক্ষিতে রচনা করেছেন কাহিনি। তাঁর নিজের ভাষায় -” ‘যদি’ একটা ঘরের মধ্যে একটা জগৎ সৃষ্টি করা যায়, চল্লিশ বছর বাদে যাকে নাম দেওয়া হবে প্রথম ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, আর তার মধ্যে রাখা যায় একটা পরিবারকে যাতে দেওয়ালগুলো কাজ করে তাদের মননের ওপর আর দুঃস্বপ্ন বেলায় ? “ এই ‘যদি’র পৃষ্ঠভূমিতে ব্রাডবেরি লিখেছেন ‘দ্য ভেল্ড’ । আর “ ‘যদি’ কোন লোক একটা মানবদেহী রোবটের অর্ডার দিতে পারে যা তার হুবহু নকল ?” ব্র্যাডবেরির কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে “মেরিয়োনেটস, ইঙ্ক।” ওয়েলসের মতো ব্র্যাডবেরিও বিজ্ঞানের কোন কচকচিতে ঢোকেননি । তাঁর ভার্চুয়াল রিয়ালিটির ঘর বা রোবট কি করে কাজ করে সে বিষয়ে তিনি বিশদ আলোচনা করেননি । শুধু খুঁজেছেন ওই ‘যদি’টার উত্তর ।


আপাততঃ এই অবধি । পরের কিস্তিতে সায়েন্স ফিকশনের মানে খুঁজতে দেখবো আরো কিছু বিশেষজ্ঞের মতামত - ডার্কো সুভিন এবং আলেক্সি ও কোরি পানশিন ।


#কল্পবিজ্ঞানের_কথা


11 views0 comments

Recent Posts

See All
bottom of page