বোনশেকার / চেরি প্রিস্ট
Boneshaker / Cherie Priest
২০১০ সালে হিউগো পুরষ্কার পাওয়া এই স্টিমপাঙ্ক উপন্যাসটি কয়েকটি কারণে স্বতন্ত্র । প্রথমতঃ লেখিকা চেরি প্রিস্ট উপন্যাসের পটভূমিকা সরিয়ে নিয়ে গেছেন আমেরিকায়, দ্বিতীয়ত, এই স্টিমপাঙ্ক কাহিনিতে ব্যবহার করেছেন জোম্বি এবং তৃতীয়তঃ গল্পের মূল চরিত্রে বসিয়েছেন এক নায়িকাকে যিনি একজন মা ।
এই কাহিনীর পটভূমিকা গৃহযুদ্ধের সময়কার এক কল্পিত আমেরিকা । উদ্ভাবক লেভিটিকাস ব্লু রাশিয়ার কাছ থেকে বরাত পেয়ে একটা ভূগর্ভস্থ ড্রিলিং মেশিন তৈরি করে । চললে হাড় কাঁপিয়ে দেয় বলে এই যন্ত্রে সংক্ষিপ্ত নাম ‘বোনশেকার’ । সিয়াটেল শহরে পরীক্ষার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকটি ব্যাঙ্কের ভূগর্ভের তোষাখানা নষ্ট করে দেয়, এবং মাটির তলা থেকে বেরোনোর পথ করে দেয় এমন এক বিষাক্ত গ্যাসের, দীর্ঘক্ষণ যার সংস্পর্শে এলে মানুষ পরিণত হয় জোম্বিতে । লেভিটিকাস ব্লু উধাও হয়ে যায় , এবং দেখা যায় ব্যাঙ্কের তোষাখানা থেকে লোপাট হয়ে গেছে নগদ লোকে বলাবলি করতে থাকে ব্লু ইচ্ছে করে টাকা লুট করার মতলবে এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে । শহর খালি করে তার চারপাশে উঁচু পাঁচিল তুলে দেওয়া হয় যাতে বিষাক্ত গ্যাস বাইরে না আসতে পারে।
এই ঘটনার পর ষোল বছর কেটে যায়, লেভিটিকাসের স্ত্রী ব্রায়ার সিয়াটেলের প্রাচীরের বাইরে থাকে । হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে, চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে সে ছেলে জীককে মানুষ করে । স্বামীর অপবাদ থেকে লুকোতে সে নিজের পদবী পালটে ফেলেছে । মানুষ লেভিটিকাস ব্লুকে যতই অপছন্দ করুক, জীকের ধারণা তার বাবা একজন যথার্থ উদ্ভাবক ছিলেন, এবং একটা অনিচ্ছাকৃত অ্যাক্সিডেন্টের দায় খামোখা তাঁর ওপর চালিয়ে দেওয়া হয়েছে । বাবার সম্মান পুনরুদ্ধার করার ইচ্ছে নিয়ে একদিন সে মাকে না জানিয়ে পাঁচিলের ওপারে বিষাক্ত গ্যাসে ঢাকা সিয়াটেলে প্রবেশ করে, এবং আটকে পড়ে। ছেলেকে উদ্ধার করতে একজন এয়ারশিপ ক্যাপ্টেনের সাহায্য নিয়ে ব্রায়ারও পাঁচিল টপকে পৌঁছে যায় ভেতরে। এই মৃত্যুপুরীতে , যেখানে ‘Life's hard. Death's easy’, মা ও ছেলের অ্যাডভেঞ্চারের সমান্তরাল কাহিনি নিয়ে গড়ে ওঠে উপন্যাস । ট্রাডিশনাল হিরো স্টোরির ছকের বাইরে গিয়ে সন্তানের জন্যে একজন মায়ের সমস্ত কিছু তুচ্ছ করে বিপদের সঙ্গে লড়াই করার এই মূল ভাবটির জন্যেই এই উপন্যাসটি স্টিমপাঙ্ক ঘরাণায় একটি অনবদ্য জায়গা করে নিয়েছে।
#কল্পবিজ্ঞান
#কল্পবিজ্ঞান_সাহিত্য
Comments